নবজাতক শিশুর পেটব্যাথা একটি সাধারন ঘটনা যা শিশুর জন্য অস্বস্তি , পীড়াদায়ক এবং অতিরিক্ত কান্নার কারণ।(১) শিশু জীবনের প্রথম ৩ মাস নিয়মিত চিৎকার করে যা প্রায় বিকালের দিকেই হয় এবং কান্নার কারন বোঝা যায় না। পেটের ব্যাথা বুঝা যায় ৩টি লক্ষণ দ্বারা-

দিনে ৩ ঘন্টার বেশি সময় কান্না, সপ্তাহে ৩দিনের বেশি সময় কান্না, এবং ৩ সপ্তাহের বেশি সময় পর্যন্ত কান্না কিন্ত শিশুর পেট পরিপূর্ণ এবং শিশু সুস্থ থাকে।(২) সাধারনত দেখা যায় যে, পেট ব্যাথার কান্না ৬ সপ্তাহ বয়সের শিশু থেকে ৬ মাস বয়সের শিশুর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।(১)  পেটের ব্যাথার শিশু এবং স্বাভাবিক শিশুদের কান্নার ধরন একই হয়ে থাকে। তবে পেটের ব্যাথার শিশু একবার কান্না শুরু করলে সহজে শান্ত হয় না এবং দীর্ঘ সময় যাবৎ কাদতে থাকে। এটি দীর্ঘকালীন কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না।(২)সাধারনত ১০-৪০% বাচ্চার মধ্যে এই সমস্যা দেখা যায়।(৩) কৌটার দুধ পানকারী এবং মায়ের দুধ পানকারী উভয় প্রকার শিশুরই পেটে ব্যাথা হতে দেখা যায়।

লক্ষণ:

কারন:

শিশুর পেটের ব্যাথার কারন জানা যায় না। শিশুদেরকে যখন দুধ খাওয়ানো হয় তখন গরুর দুধের প্রোটিনের বিরূদ্ধে এন্টিবডি কাজ করে যা পেটের ব্যাথার কারন।(২) বাচ্চাকে ১ম স্তন পানের সময় কমিয়ে ২য় স্তন পানে উৎসাহী করা হয়, যাতে মায়ের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।(৫) এতে শিশুর পেটের ধারন ক্ষমতা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ক্যালরি গ্রহন করতে পারে না, যেখানে ফোর মিল্ক ( শুরুর দিকের পাতলা দুধ) হাইন্ড মিল্কের (শেষের দিকের ঘন দুধ) তুলনায় কম ক্যালরি সম্পন্ন।(৫) এর ফলসরূপ শিশুর ক্ষুধার্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা যায়।(৫) খাবারে চর্বির পরিমান কম হওয়ায় পেট দ্রæত খালি হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ল্যাকটোজের ঘনত্ব বেশি থাকায় ল্যাকটোজের হজম কমে যায় ফলে ডায়রিয়া দেখা দেয়।(৫) চিকিৎসকের মতে, বাচ্চাকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর সময় পজিশন এবং এটাচমেন্ট ঠিক না হলে বাচ্চার পেটে ব্যাথা হয় যা বাচ্চার কান্নার কারন। গ্যাস্ট্রোইসোফেগাল রিফ্লাক্স (খাবার পাকস্থলি থেকে উপরের দিকে খাদ্যনালীতে উঠে আসা) এর ফলে পেটে ব্যাথা দেখা দেয়। হাইপারপেরিস্ট্যালসিস (বাচ্চার পাকস্থলিতে অতি দ্রুত খাবার প্রবেশ করা) এর কারনে পেটে ব্যাথার সূচনা হয়।(২) শিশুর জন্মের পর থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত পাকস্থলি অপরিণত থাকে যার ফলে তাদের বিভিন্ন ধরনের পাকস্থলির সমস্যা দেখা দেয়। পাকস্থলির সমস্যা গুলোর মধ্যে পেটে ব্যাথা অন্যতম। পাকস্থলির হরমোন যেমন মলিটিন ব্যাথা হওয়ার অন্যতম কারন।(২) ধারনা করা হয় মলিটিন হাইপারপেরিস্ট্যালসিসের (বাচ্চার পাকস্থলিতে অতি দ্রুত খাবার প্রবেশ করা) কারন যা পেট ব্যাথা ঘটায়।(২) একটি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে যে, স্নায়ুবিক (নিউরোজেনিক), হজমের গোলযোগ (গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল), জীবানুঘটিত (মাইক্রোবিয়াল) এবং মানসিক (সাইকোসোশাল) উপসর্গ গুলি শিশুর ব্যাথা হওয়ায় অসুস্থতার কারণ হচ্ছে।(১)

সমাধান:

  • শিশুর পেটব্যাথা দেখা দিলে সাধারনত খাবারে কোনো পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হয় না, বিশেষত যে বাচ্চারা মায়ের দুধ পান করে।(১)
  • মাতৃদুগ্ধ পানকারী শিশুর মাতৃদুগ্ধ দেয়া বন্ধ করা যাবে না।
  • একটি স্তন সম্পূর্ণ খালি করে খাওয়াতে হবে, তারপর অপর স্তনটি খাওয়াতে হবে।
  • পজিশন এবং এটাচমেন্ট ঠিক রেখে বাচ্চাকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
  • বাচ্চাকে কৌটার দুধ খাওয়ালে তা বন্ধ করে দিয়ে বেশি করে মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে।
  • আঁশ খাবার পরিপূরক হিসেবে ব্যবহার করে কোনো ফল পাওয়া যায় না।(১,৪)
  • গবেষণায় দেখা গেছে যে h Lactobacillus reuteri নামক প্রোবায়োটিক ব্যবহারে শিশুর কান্নার  সময় কমে আসে এবং মায়ের বিষন্নতাও কমে যায়।
  • বাচ্চার মাথার দিকটা উচু করে খাওয়াতে হবে এবং খাওয়ানোর সাথে সাথে না শুর্য়িয়ে ঘাড়ের উপর নিয়ে পিঠে চাপড় দিয়ে ঢেকুর (Burping) তুলে দিতে হবে।
  • শিশুর পেটে গ্যাস আটকে গেলে শিশুকে পিঠে ভর দিয়ে শুয়িয়ে দিতে হবে এবং পেটে আলতভাবে হাতের তালু দিয়ে মালিশ করতে হবে ঠান্ডা গরম শেক দিতে হবে।
  • শিশুর পা দুটি একবার সামনের দিকে এবং আরেকবার পিছনের দিকে সাইকেল চালানোর মতো করে পা নাড়াতে হবে।

References

  1. Zeevenhooven, J., Browne, P.D., L’Hoir, M.P. et al. Infant colic: mechanisms and management. Nat Rev Gastroenterol Hepatol 15, 479–496 (2018). https://doi.org/10.1038/s41575-018-0008-7
  2. DONNA M. ROBERTS, M.D., MICHAEL OSTAPCHUK, M.D., and JAMES G. O’BRIEN, M.D., Infantile colic; University of Louisville School of Medicine, Louisville, Kentucky American Family Physician. 2004 Aug 15;70(4):735-740.
  3. Johnson, JD; Cocker, K; Chang, E (1 October 2015). “Infantile Colic: Recognition and Treatment”American Family Physician92 (7): 577–82. PMID 26447441Archived from the original on 26 August 2017. Retrieved 22 July 2017.
  4. Iacovou, M; Ralston, RA; Muir, J; Walker, KZ; Truby, H (August 2012). “Dietary management of infantile colic: a systematic review”. Maternal and Child Health Journal16 (6): 1319–31. doi:10.1007/s10995-011-0842-5PMID 21710185S2CID 8404014
  5. Woolridge MW, Fisher C. Colic, “overfeeding”, and symptoms of lactose malabsorption in the breast-fed baby: a possible artifact of feed management? Lancet. 1988 Aug 13;2(8607):382-4. doi: 10.1016/s0140-6736(88)92847-4. PMID: 2899785.

11 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *