পর্যাপ্ত পরিমাণে মায়ের দুধ তৈরি নির্ভর করে:
- মায়ের মানসিক অবস্থার উপর
- মায়ের দেহে হরমোনের পরিমাণের উপর
- যথেষ্ট পরিমাণে স্তন খালি হওয়ার উপর
মায়ের বুকের দুধ তৈরির প্রক্রিয়াঃ
অক্সিটোসিন এর কাজ:
- অক্সিটোসিন মায়ের গর্ভাশয়কে সংকুচিত করে। এটা মায়ের রক্তপাত কমিয়ে দেয়।
- মায়ের চিন্তা ভাবনা ও অনুভ‚তি অক্সিটোসিন রিফ্লেক্সকে প্রভাবিত করতে পারে। মায়ের অনুভ‚তি ও আত্ববিশ্বাস অক্সিটোসিন রিফ্লেক্সকে উদ্দীপ্ত করে তার দুধ নিঃসরনে সাহায্য করে।
শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর সঠিক অবস্থান ও সংস্থাপন
শিশুকে দুধ খাওয়ানোর সময় মায়ের অবস্থান:
১. মা কে আরামদায়কভাবে বসতে হবে।
২. প্রয়োজনে পিঠে অথবা কোলের উপর বালিশ দিয়ে সোজা হয়ে হেলান দিয়ে বসবেন।
৩. মাকে চিন্তামুক্ত থাকতে হবে।
অবস্থান(পজিশন): অবস্থান বলতে শিশুকে দুধ খাওয়ানোর সময় মা ও শিশুর আরামদায়কভাবে বসা বা শোয়াকে বোঝানো হয়।
শিশুকে দুধ খাওয়ানোর সময় শিশুর অবস্থান (৪ টি মূল তথ্য):
১. শিশুর মাথা মায়ের হাতের কনুই এ এবং পাছা (Buttock) মায়ের হাতের তালুতে থাকবে।
২. শিশুর মাথা, ঘাড় এবং শরীর একই সরল রেখায় থাকবে এবং মা শিশুর সমস্ত শরীর ধরে থাকবে।
৩. শিশুর পেট মায়ের পেটের সাথে লেগে থাকবে।
৪. দুধ খাওয়ানোর সময় শিশুর মুখ মায়ের স্তনের দিকে ঘোরানো থাকবে।
সংস্থাপন: সংস্থাপন বলতে মায়ের স্তনে শিশুর মুখ কিভাবে লেগে থাকলে শিশু দুধ খেতে পারবে তা বোঝায়।
মা ও শিশুর সঠিক সংস্থাপনের ৪ টি মূল তথ্য–
১. শিশুর মুখ বড় করে হা করা থাকবে।
২. স্তনের উপরের কালো অংশ নিচের অংশের চেয়ে বেশী দেখা যাবে।
৩. শিশুর থুতনি মায়ের স্তনে লেগে থাকবে।
৪. নিচের ঠোঁট বাইরের দিকে উল্টানো থাকবে।
জমজ শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর বিভিন্ন পদ্ধতি:
শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর বিভিন্ন অবস্থানের ব্যবহার
১. (cradle) পজিশনে সুস্থ ও স্বাভাবিক ওজনের শিশুরা দুধ পান করবে
২. Side lying পজিশনে সুস্থ ও স্বাভাবিক ওজনের শিশুরা দুধ পান করবে, সিজারিয়ান মাও এই পজিশনে খাওয়াতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন ।
৩. (Cross cradle hold) পজিশনে-
– স্বল্প ওজনের শিশুরা
– অসুস্থ শিশু
– দূর্বল শিশু
– নাকে স্যালাইন দেয়া হয়েছে এমন শিশু
– স্নায়বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ শিশু
– মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত শিশু
– বড় স্তন অথবা বড় স্তন বোঁটা সম্বলিত মায়েরা সহজে দুধ পান করাতে পারে
– মায়ের স্তনের বোঁটা ফাঁটা বা ঘাঁ হলে মায়েরা সহজে দুধ পান করাতে পারে
৪.Modified Cross cradle hold ও ড্যানসার হোল্ড পজিশনে স্নায়বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ শিশু , মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত শিশু
মায়েরা সহজে দুধ পান করাতে পারে
৫. Football hold,অস্ট্রেলিয়ান হোল্ড ,পজিশনে ঠোঁট কাটা ও তালু কাটা,হার্টের সমস্যাযুক্ত শিশুদের মায়েরা সহজে দুধ পান করাতে পারে
৬. Football hold, Inverted side lyingপজিশনে সিজার করা মায়েরা শিশুদের সহজে দুধ পান করাতে পারে ।
মায়ের একদিকের স্তনের দুধ খাওয়া শেষ হলে অন্যদিকের স্তন শিশুকে প্রদানের গুরুত্ব :
মা শিশুকে একবারে অনেকক্ষণ (শিশু যতক্ষণ চায়) এক পাশের স্তন খাওয়াবেন তাহলে শিশু মায়ের দুধের প্রথমের পাতলা দুধ (Fore milk) ও পরের ঘন দুধও (Hind milk) পাবে, যেটা শিশুর শরীরে পুষ্টি ও শক্তি যোগায়। শিশুকে পরিতৃপ্ত রাখে ও শিশুর ওজন বাড়ায়।
একদিকের স্তনের দুধ খাওয়া শেষ হলে অন্যদিকের স্তন শিশুকে প্রদান করতে হবে। ক্ষুধা থাকলে শিশু হা করবে এবং দুধ খাবে, না হলে পরবর্তী খাবারের সময় অন্যদিকের স্তন থেকে খাওয়ানো শুরু করতে হবে।
ব্রেস্টফিডিংপিলোর/Nursing pillow এর ব্যবহার:
১. মাতৃদুগ্ধদানের বিশেষ বালিশ বা Breastfeeding Pillow ব্যাবহার করে মা সহজেই তার শিশুকে ভালভাবে এটাচমেন্ট ও পজিশন বা অবস্থান সংস্থাপন ঠিক করে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে পারে ।
২. জমজ শিশুদের সহজেই এই বালিশ ব্যাবহার করে একইসাথে মা সহজেই দুধ খাওয়াতে পারে ।
৩. বিভিন্ন ধরনের ব্রেস্টফিডিং পজিশন যেমন:- ক্রেডেল, ক্রস ক্রেডেল, ফুটবল ইত্যাদির মাধ্যমে শিশুকে দুধপান সহজ হয় ।
Breastfeeding Pillow কিনতে ও বিভিন্ন কোর্স করতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-
Breastfeeding Pillow – Bangladesh Breastfeeding Foundation (bbf.org.bd)
Pregnancy Pillow – Bangladesh Breastfeeding Foundation (bbf.org.bd)
মায়ের দুধ চেপে/গেলে বের করে রাখার প্রয়োজনীয়তা ও পদ্ধতি
প্রথমে দুই হাত ও ১টি মুখওয়ালা বাটি বা কাপ সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।স্তনের উপরের দিকে বৃদ্ধা আঙ্গুল ও নিচের কালো অংশের বাইরে চার আঙ্গুল রাখতে হবে।
এবার স্তনের কালো অংশের উপর চাপ দিয়ে বোঁটার দিকে আনতে হবে, কোন অবস্থায় বোঁটায় চাপ দেওয়া যাবে না। এভাবে স্তনের কালো অংশের চারদিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চাপ দিয়ে দুধ গালতে হবে।
গালানো দুধ –
১.ঘরের ভিতরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ৮ ঘন্টা
২. এবং নরমাল ফ্রিজে (৪ ডিগ্রি তাপে ) ২৪ ঘন্টা
৩. ডিপ ফ্রিজে ৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষন করা যায়
তবে ফ্রিজে সংরক্ষিত দুধ চুলায় তাপে নয়, গরম পানির মাঝে ফ্রিজে রাখা দুধের পাত্রটি রেখে তা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আনতে হবে। আগে গালানো দুধ আগে খাওয়াতে হবে। পরে গালানো দুধ পরে খাওয়াতে হবে) প্রয়োজন অনুসারে বোতলে নম্বর এবং তারিখ দিতে রাখতে হবে।
মায়ের গেলে রাখা (সংরক্ষিত) দুধ শিশুকে খাওয়ানোর পদ্ধতি:
শিশুকে একবার যতটুকু খাওয়ানো হবে ততটুকু দুধ চামচে (মেলামাইন বা সিরামিক) অথবা কাপে (মেলামাইন বা সিরামিক) নিতে হবে। কারন ষ্টীল বা প্লাষ্টিকের চামচের মাথা মসৃণ থাকেনা, ফলে শিশুর গাল/ঠোঁট কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে কোন অবস্থাতেই ফিডার বা বোতলে দেয়া যাবে না।
চামচ/কাপ হালকা করে শিশুর নীচের ঠোঁটে ধরতে হবে।
চামচ/ কাপটিকে অল্প একটু কাত করে ধরতে হবে যাতে অল্প একটু দুধ শিশুর ঠোঁটে লাগে।
শিশুটি ঠোঁটে চামচ/কাপের ছোঁয়া পেয়ে মুখ হা করবে এবং জিহবা দিয়ে মুখে দুধ নিতে থাকবে এবং অল্প অল্প করে চুষে খেয়ে ফেলবে।